বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের নাগরিক (পঞ্চম অধ্যায়)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় - | NCTB BOOK
433
433

রাষ্ট্রের উন্নতি নাগরিকের যোগ্যতা ও দক্ষতার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। সুনাগরিক দেশের জন্য হবে সম্পদ। আর তা না হলে দেশের উন্নতি বাধাগ্রস্ত হবে। দেশের প্রগতি ও ব্যর্থতা উভয়ই নির্ভর করে নাগরিকের সততা, দক্ষতা এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের উপর। এজন্য নাগরিকদের হতে হবে সুনাগরিক। বর্তমান অধ্যায়ে সুনাগরিকের প্রয়োজনীয় গুণাবলি, এর প্রতিবন্ধকতা, গুরুত্ব ইত্যাদি দিক সম্পর্কে আমরা জানব।

এ অধ্যায় শেষে আমরা-

  • সুনাগরিকের গুণাবলি বর্ণনা করতে পারব;
  • বাংলাদেশে সুনাগরিক হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো বর্ণনা করতে পারব এবং প্রতিবন্ধকতাগুলো দূরীকরণের উপায় ব্যাখ্যা করতে পারব;
  • বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে সুনাগরিকের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব;
  • নাগরিকের অধিকার অর্জন ও দায়িত্ব পালন সম্পর্কে বর্ণনা করতে পারব।
common.content_added_by

সুনাগরিকের গুণাবলি (পাঠ ১)

287
287

একটি দেশের প্রকৃত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সুনাগরিক। কেউ সুনাগরিক হয়ে জন্মগ্রহণ করে না। সুনাগরিকতা অর্জন করতে হয়। সুনাগরিকের কতগুলো গুণ বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এগুলো অর্জনের মাধ্যমে নাগরিক সুনাগরিকে পরিণত হতে পারে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে সুনাগরিক হতে হলে একজন নাগরিককে তিনটি মৌলিক গুণের অধিকারী হতে হবে। নিচের ছকে সুনাগরিকের গুণাবলি কী কী তা উল্লেখ করা হলো।

বুদ্ধি: বুদ্ধিমান নাগরিক যেকোনো রাষ্ট্রের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। বুদ্ধিমত্তা অর্জনের সবচেয়ে বড়ো উপায় হলো শিক্ষা লাভ করে জ্ঞান অর্জন করা। অতএব, নাগরিকদের যথার্থ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। কারণ বুদ্ধিমান নাগরিক উপযুক্ত প্রতিনিধি নির্বাচন, দক্ষতার সাথে দেশ পরিচালনা, রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও সফলতাসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজে ভূমিকা রাখতে পারে। এজন্য বাবা-মায়ের উচিত সন্তানদের যথাযথ শিক্ষা দেওয়া। সরকারের দায়িত্ব উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

আত্মসংযম: সুনাগরিককে আত্মসংযমী হতে হবে। আত্মসংযম নাগরিককে অসৎ কাজ (যেমন-দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, স্বার্থপরতা, পক্ষপাতিত্ব ইত্যাদি) থেকে বিরত রাখে। দেশ ও সমাজের স্বার্থে কাজ করতে ও নিয়ম মেনে চলতে অনুপ্রাণিত করে। তাই আত্মসংযম ছাড়া সুনাগরিক হওয়া সম্ভব নয়।

আত্মসংযমী নাগরিক নিয়ম-কানুন মেনে চলে, অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করে, দেশের স্বার্থকে নিজের স্বার্থের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। অন্যায় কাজ ও দলীয় স্বার্থপরতা থেকে বিরত থাকে এবং রাষ্ট্রের সার্বিক মঙ্গলের জন্য কাজ করে। সুনাগরিকের এ সকল কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রের অগ্রগতির জন্য সহায়ক।

বিবেক-বিচার: বিবেক বিচার বলতে বোঝায় ভালো-মন্দের জ্ঞান, দায়িত্ব-কর্তব্যের জ্ঞান। একজন নাগরিককে
শুধু বুদ্ধিমান ও আত্মসংযমী হলেই চলবে না, যেকোনো কাজ সম্পন্ন করতে হলে তাকে ভাবতে হবে কাজটি ভালো না মন্দ। মন্দ কাজটি পরিহার করে ভালো কাজটি করতে হবে। এছাড়া সমাজ বা রাষ্ট্রের কোনো সমস্যা সমাধান করতে হলে নাগরিককে তার বিবেক দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিবেক হলো সুনাগরিকের জাগ্রত শক্তি। অতএব নাগরিক নিজে বিবেকবান হবে। অন্যদেরও বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন হতে উৎসাহিত করবে। উল্লিখিত গুণগুলো ছাড়াও সুনাগরিকের আরও কতগুলো গুণ থাকা প্রয়োজন। যেমন: সুনাগরিককে দেশের শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে হবে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করার মতো মনোভাব থাকতে হবে, আইনশৃঙ্খলা মানতে হবে, আত্মবিশ্বাসী ও দৃঢ় মনোভাবের অধিকারী হতে হবে এবং দেশের স্বার্থকে বড়ো করে দেখতে হবে।

এতক্ষণ আমরা সুনাগরিকের গুণাবলি জানলাম। সুনাগরিক দেশের মূল্যবান সম্পদ। উপযুক্ত সার, মাটি, এবং পরিচর্যা ছাড়া যেমন একটি গাছ ভালোভাবে বাড়তে পারে না, তেমনি নাগরিকের মধ্যে এসব গুণের অভাব হলে দেশ ভালোভাবে চলতে পারে না। অতএব, আমাদের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের অবশ্যই এ গুণগুলো অর্জন করতে হবে। তাহলেই আমরা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে বিশ্বের বুকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব।

কাজ-১: দলে বিভক্ত হয়ে সুনাগরিকের গুণাবলিগুলো লেখ এবং শ্রেণিকক্ষে আলোচনা কর।
common.content_added_by

পাঠ ২

81
81
common.please_contribute_to_add_content_into পাঠ ২.
common.content

বাংলাদেশে সুনাগরিকতার প্রতিবন্ধকতা (পাঠ ২.১)

365
365

সুনাগরিকতা অর্জনের ক্ষেত্রে রয়েছে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা। কারণ, সুনাগরিকের গুণগুলো পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়। আমাদের সমাজে রয়েছে নানা ধরনের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা। এগুলো বাংলাদেশের নাগরিকদের সুনাগরিক হয়ে উঠার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে। নিচে বাংলাদেশে বিরাজমান এ সংক্রান্ত কয়েকটি প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

নির্লিপ্ততা: সাধারণভাবে কাজের প্রতি নাগরিকদের উদাসীনতাকে বলে নির্লিপ্ততা। বিভিন্ন কারণে নির্লিপ্ততা তৈরি হয়। যেমন- নিরক্ষরতা, উপযুক্ত শিক্ষার অভাব, অলসতা, দারিদ্র্য ও কাজে অনীহা। আমাদের দেশের নাগরিকদের মধ্যে এ জাতীয় নির্লিপ্ততা লক্ষ করা যায়। এর ফলে তারা রাষ্ট্রের সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করতে চায় না। এমনকি নাগরিক হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে না।

ব্যক্তিস্বার্থ: এটি সুনাগরিকতা অর্জনের পথে আরেকটি বড়ো অন্তরায়। ব্যক্তির স্বার্থপরতা এর ফলে ব্যক্তি নিজের স্বার্থকে দেশের স্বার্থের চেয়ে বড়ো করে দেখে। এর ফলে নাগরিক সহজেই দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও পক্ষপাতিত্ব করে থাকে। এ কারণেই নির্বাচনে অনেক সময় যোগ্য লোককে ভোট না দিয়ে দলীয় ও ব্যক্তিগত স্বার্থ বিবেচনা করে ভোট দেয়। উপযুক্ত প্রার্থীকে বাদ দিয়ে নিজ আত্মীয় বা পরিচিতজনকে চাকরি দেয়। স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক অনিয়ম করে। এ সব কিছুই সুনাগরিকতার প্রতিবন্ধকতা। এ ধরনের কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

দলীয় গোষ্ঠীতান্ত্রিক মনোভাব : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা রাজনৈতিক দল ছাড়া কার্যকর থাকে না। ফলে এ শাসনব্যবস্থায় এক ধরনের দলীয় মনোভাব কাজ করে। গণতন্ত্র আমাদেরকে ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখায়। কিন্তু একই ব্যবস্থায় আবার নিজ দলের বা গোষ্ঠীর প্রতি একরকম, বিরোধী দলের লোকদের প্রতি অন্যরকম আচরণ করলে তা সুনাগরিক হওয়ার পথে একটি বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

অজ্ঞতা ও নিরক্ষরতা : অজ্ঞ ও নিরক্ষর লোক অনেক কিছু জানতে ও বুঝতে পারে না। আমাদের দেশে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নাগরিক নিরক্ষর। যারা লেখাপড়া জানেন তাদের অনেকেই স্বল্প শিক্ষিত। ফলে তারা প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়। তাদের উপর রাষ্ট্রের দেওয়া দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে না। অতএব, বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক নাগরিককে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে তাদের উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।

ধর্মান্ধতা : সুনাগরিকতার বিকাশে ধর্মান্ধতা একটি বিরাট অন্তরায়। ধর্মান্ধতা ব্যক্তিকে অন্য ধর্মের প্রতি বিদ্বেষী করে তোলে। এ ধরনের মনোভাব বিভিন্ন ধর্মের লোকের মধ্যে বিভেদ ও সংঘাত সৃষ্টি করে। এ ধরনের পরিস্থিতি দেশের সংহতি, উন্নতি ও প্রগতিকে বিনষ্ট করে।

দাম্ভিকতা: এটি একটি নেতিবাচক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। এর ফলে ব্যক্তি নিজেকে অন্যের চেয়ে বড়ো করে দেখে। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় না। নিজের মতামত অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে চায়। এ ধরনের মানসিকতা সুনাগরিকতার পথে বিরাট বাধা।

সাম্প্রদায়িকতা: একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মের আধিপত্য থেকে সাম্প্রদায়িকতার মনোভাব তৈরি হয়। সংখ্যালঘিষ্ঠ লোকদের মধ্যেও এ মনোভাব তৈরি হতে পারে যদি তারা তাদের ধর্মকে অন্যান্য ধর্মের চেয়ে একমাত্র সত্য হিসেবে বিশ্বাস করে। ফলে দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ ও অশান্তি বিরাজ করে।

অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা: বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এদেশের ১৮.৭ ভাগ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে
বসবাস করে। দারিদ্র্যের কারণে আমাদের দেশে প্রায় এক-চতুর্থাংশ লোক লিখতে-পড়তে পারে না। ফলে তাদের বুদ্ধিমত্তার যথাযথ বিকাশ হয় না। তাদের বিবেকও সঠিকভাবে কাজ করে না। যা সুনাগরিকতা অর্জনের জন্য একটি অন্যতম বাধা।

common.content_added_by

সুনাগরিকের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের উপায় (পাঠ ২.২)

169
169

১। উপযুক্ত শিক্ষাগ্রহণ করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। সকল ধরনের অলসতা ও নির্লিপ্ততা পরিহার করে দেশ গঠনে অংশগ্রহণ করতে হবে।
২। ব্যক্তির চেয়ে দেশকে বড়ো মনে করে ব্যক্তিগত স্বার্থ পরিত্যাগ করতে হবে।
৩। দলীয় মনোভাব পরিত্যাগ করে সর্বজনীন মনোভাব পোষণ করতে হবে।
৪। শুধু ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী ইত্যাদি ভেদে মানুষকে পৃথক না করে সকলের প্রতি সম-আচরণের মনোভাব জাগ্রত করতে হবে।
৫। দাম্ভিকতা পরিহার করে সকলের জন্য কল্যাণকর মতামতের উপর গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। একজন মানুষও যদি কল্যাণকর মতামত প্রদান করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তার মতামতকে স্তব্ধ করা যাবে না।
৬। অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা দূর করে সকলের জন্য সম-মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

পরিশেষে বলা যায়, সুশিক্ষা ও স্বশিক্ষায় শিক্ষিত নাগরিক সকল ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সক্ষম।

কাজ-১:
সুনাগরিকতা অর্জনের প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে চিন্তা কর এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ খাতায় লেখ। একটি পোস্টার পেপারে পয়েন্টগুলো লিখে শ্রেণিকক্ষে ঝুলিয়ে দাও।
common.content_added_by

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সুনাগরিকের গুরুত্ব (পাঠ ৩)

164
164

একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের আর্থসামাজিক সমস্যা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- নিরক্ষরতা, বেকারত্ব, দারিদ্র্য, দুর্বল অর্থনীতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দুর্নীতি, অধিক জনসংখ্যা ইত্যাদি। প্রতিযোগিতামূলক বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে এ সকল সমস্যার সমাধান অপরিহার্য। কিন্তু সরকারের একার পক্ষে এসব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। এজন্য নাগরিকদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য দেশের জনগোষ্ঠীকে দক্ষ ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। একমাত্র সুনাগরিকের পক্ষেই দেশের এসব আর্থসামাজিক সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানে যথাযথ ভূমিকা পালন করা সম্ভব। আমরা জানি সুনাগরিকের রয়েছে তিনটি প্রধান গুণ- বুদ্ধি, আত্মসংযম এবং বিবেক-বিচার। সুনাগরিকেরা রাষ্ট্রীয় সমস্যা সমাধানের জন্য উপযোগী ও দক্ষ হয়। কারণ সুনাগরিক সহজেই আর্থসামাজিক সমস্যাগুলো বুঝতে পারে এবং তাদের বুদ্ধিমত্তা, দক্ষতা, বিবেক-বিচারবোধ ইত্যাদির সাহায্যে এসব সমস্যা সামাধানে নাগরিকের প্রত্যাশিত ভূমিকা ও দায়িত্ব পালন করতে পারে। অতএব, সুনাগরিক দেশের মূল্যবান সম্পদ। সুনাগরিক বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের মাধ্যমে সমাজ ও সরকারকে সঠিক পথে পরিচালিত, আত্মনির্ভরশীল ও একটি উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

কাজ-১:
দলে বিভক্ত হয়ে একজন সুনাগরিক কী কী নীতিহীন কাজ থেকে বিরত থাকবে-তার তালিকা তৈরি কর এবং শ্রেণিতে উপস্থাপন কর।
common.content_added_by

নাগরিকের অধিকার অর্জন ও দায়িত্ব পালন (পাঠ ৪)

109
109

বিশ্বের সব দেশের নাগরিক রাষ্ট্রের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের অধিকার ভোগ করে। বিনিময়ে নাগরিককেও রাষ্ট্রের প্রতি কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয়। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। জন্মসূত্রে আমরা এ নাগরিকত্ব অর্জন করেছি। নাগরিক হিসেবে ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমরাও সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার ভোগ করি এবং বিভিন্ন ধরনের সুযোগ গ্রহণ করি।

নাগরিকদের অধিকার

বাংলাদেশের সরকার পরিচালনার দলিল "বাংলাদেশের সংবিধান"-এ অধিকারগুলো উল্লেখ করা আছে। এগুলোকে বলা হয় নাগরিকের মৌলিক অধিকার যা জাতি ধর্ম, শ্রেণি, লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের অধিকার। সংক্ষেপে আমাদের মৌলিক অধিকারগুলো হলো: ১. জীবনধারণের অধিকার ২. সম্পত্তির অধিকার ৩. চলাফেরার অধিকার ৪. ধর্মচর্চার অধিকার ৫. চুক্তি করার অধিকার ৬. চিন্তা ও বিবেকের অধিকার ৭. সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ৮. সভা-সমিতির অধিকার ৯. পরিবার গঠনের অধিকার ১০. সংস্কৃতি ও ভাষার অধিকার ১১. কর্ম লাভের অধিকার ১২. স্বাস্থ্য ও শিক্ষা লাভ করার অধিকার ১৩. আইন মেনে চলার অধিকার ১৪. অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার পাওয়ার অধিকার ১৫. স্বাধীন মতামত প্রকাশের অধিকার ১৬. রাষ্ট্রীয় পরিসরে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার ইত্যাদি।

নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য

রাষ্ট্রের কাছ থেকে উল্লিখিত অধিকার অর্জনের পাশাপাশি রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকদের কতকগুলো দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। এর মধ্যে প্রধান দায়িত্বগুলো হলো: ১. রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ২. আইন মেনে চলা ৩. ভোটাধিকার প্রয়োগ করা ৪. নিয়মিত কর প্রদান ৫. সরকারি কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা ৬. সন্তানদের শিক্ষাদান করা।

নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্যগুলো দেশের সকল নাগরিকের জন্য প্রযোজ্য। এসব অধিকার ছাড়া নাগরিকের যথাযথ মানসিক বিকাশ সম্ভব নয়। তাই নাগরিক নিজে এ অধিকারগুলো ভোগ করবে এবং অন্য নাগরিকেরা যাতে ভোগ করতে পারে সেজন্য সচেতন থাকবে। উদাহরণস্বরূপ, নাগরিক নিজে শিক্ষিত হবে অন্যকে শিক্ষিত করার কাজে সহায়তা দেবে। প্রত্যেক নাগরিক নিজের ধর্ম নিজে পালন করবে। অন্য ধর্মের লোককে তাদের নিজ ধর্ম পালনে কোনো বাধা দিবে না। নাগরিক নিজে স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করবে। অন্যকেও মত প্রকাশের সুযোগ দিবে এবং তাদের মতামতকে শ্রদ্ধা করবে। এভাবে নাগরিক নিজের অধিকার ভোগের পাশাপাশি অন্যদের অধিকার সমুন্নত রাখার কাজে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। কোনোভাবেই একজনের অধিকার ভোগ যেন অন্যের অধিকার এবং স্বাধীনতা ভঙ্গের কারণ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

রাষ্ট্রের কাছ থেকে বিভিন্ন অধিকার ভোগের পাশাপাশি নাগরিক নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। আজকাল রাষ্ট্রের উন্নয়নে অধিকার ভোগের চেয়ে নাগরিকের কর্তব্য পালনের উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। নাগরিককে তাই নিজের কর্তব্যগুলো ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, নাগরিক রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা মেনে চলবে। কর্মক্ষেত্রে নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে। সন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করবে এবং রাষ্ট্রের উন্নয়নে সহায়ক সব ধরনের কাজে সহযোগিতা ও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে। প্রকৃতপক্ষে নাগরিকের কর্তব্য পালনের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব।

কাজ-১:
কীভাবে নাগরিক হিসেবে তুমি তোমার কর্তব্য পালন করবে সে সম্পর্কে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি কর ও শ্রেণিতে উপস্থাপন কর।
common.content_added_by

অনুশীলনী

237
237

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. একজন নাগরিককে কয়টি মৌলিক গুণের অধিকারী হতে হয়?
ক. একটি
গ. তিনটি
খ. দুটি
ঘ. চারটি

২. বুদ্ধিমান নাগরিক হতে হলে-
i. পড়ালেখা করতে হবে
ii. নিজস্ব লোকজনকে ভোট দিতে হবে
iii. দেশের উন্নয়নে কাজ করতে হবে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i
গ. iও iii
খ. iও ii
ঘ. i, ii ও iii

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও।
তপু রিকশায় যাচ্ছিল। হঠাৎ সে দেখল একটি গাড়ি একজন পথচারীকে ধাক্কা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তপু দ্রুত অন্যদের সহযোগিতায় ড্রাইভারকে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করল এবং আহত পথচারীকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে গেল।
৩. তপুর আচরণে মূলত কোন গুণটির প্রতিফলন ঘটেছে?
ক. বুদ্ধি
গ. আত্মসংযম
খ. বিবেক
ঘ. আত্মবিশ্বাস

8. তপুর কার্যক্রম থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি-
i. তপু একজন সুনাগরিক
ii. সে বাংলাদেশের মূল্যবান সম্পদ
iii. তার মতো মানুষেরাই উন্নত দেশ গড়ে তুলতে পারবে।
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i
খ. i ও ii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii

সৃজনশীল প্রশ্ন

১. দুই বান্ধবীর কথোপকথন
সামিহা: লাজিন, কিছুদিন আগে পত্রিকায় রিকশাওয়ালার খবরটি পড়েছিস?
লাজিন: হ্যাঁ পড়েছি। তার রিকশায় পড়ে থাকা একজন যাত্রীর এক লক্ষ টাকার একটি ব্যাগ পেয়েও নেয়নি। বরং যাত্রীর ঠিকানা খুঁজে বের করে পুরো টাকাটা যাত্রীকে ফেরত দেয়।
সামিহা: ঐ রিকশাওয়ালার মতো মানুষই আমাদের দেশের জন্য দরকার। সত্যিই রিকশাওয়ালার বিচক্ষণতা ও সচেতনতা প্রশংসার দাবিদার।
ক. জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে কততম দেশ?
খ. সাম্প্রদায়িকতা সুনাগরিকত্ব অর্জনের একটি অন্তরায়, কথাটি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের রিকশাওয়ালার মাঝে সুনাগরিকের কোন গুণটি প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. "সুনাগরিক হতে হলে রিকশাওয়ালার উক্ত গুণটিই যথেষ্ট" তুমি কি একমত? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

২. সোবহান সাহেব এবং শেখর বাবু দুই বন্ধু। সোবহান সাহেব একজন সরকারি কর্মকর্তা। তিনি কিছুদিন পূর্বের নির্বাচনে একটি ভোট কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের দায়িত্ব সম্পন্ন করেন। শেখর বাবু একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। এ বছর তিনি শ্রেষ্ঠ করদাতার পুরস্কার পান। তাদের সন্তানদের লেখাপড়ায় উভয়েই অত্যন্ত সচেতন। সোবহান সাহেব ঈদসহ অন্যান্য উৎসবে শেখর বাবুর পরিবারকে দাওয়াত করেন। শেখর বাবুও পূজা-পার্বণে সোবহান সাহেবের পরিবারকে তাঁর বাসায় নিয়ে আসেন। উভয় পরিবারই নিজেদের আচার-অনুষ্ঠান স্বাধীনভাবে পালন করে।
ক. রাষ্ট্রের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ কী?
খ. 'সুনাগরিক হওয়ার ক্ষেত্রে নির্লিপ্ততা একটি বাধা'- কথাটি ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের উভয় পরিবারই স্বাধীনভাবে নিজেদের আচার-অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে নাগরিকের কোন অধিকারটি ভোগ করছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. "সোবহান সাহেব এবং শেখর বাবু অধিকার ভোগের পাশাপাশি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে যাচ্ছেন"-পাঠ্যপুস্তকের আলোকে ব্যাখ্যা কর।

common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion